ফল ধরেছে বটের ডালে ডালে ; 
অফুরন্ত আতিথ্যে তার সকালে বৈকালে
বনভোজনে পাখিরা সব আসছে ঝাঁকে ঝাঁক—
মাঠের ধারে আমার ছিল চড়িভাতির ডাক । 
যে যার আপন ভাঁড়ার থেকে যা পেল যেইখানে 
মালমসলা নানারকম জুটিয়ে সবাই আনে । 
জাত-বেজাতের চালে ডালে মিশোল ক'রে শেষে 
ডুমুরগাছের তলাটাতে মিলল সবাই এসে । 
বারে বারে ঘটি ভ'রে জল তুলে কেউ আনে , 
কেউ চলেছে কাঠের খোঁজে আমবাগানের পানে । 
হাঁসের ডিমের সন্ধানে কেউ গেল গাঁয়ের মাঝে , 
তিন কন্যা লেগে গেল রান্নাকরার কাজে । 
গাঁঠ-পাকানো শিকড়েতে মাথাটা তার থুয়ে 
কেউ পড়ে যায় গল্পের বই জামের তলায় শুয়ে ।  
সকল-কর্ম-ভোলা 
দিনটা যেন ছুটির নৌকা বাঁধন-রশি-খোলা 
চলে যাচ্ছে আপনি ভেসে সে কোন্‌ আঘাটায়  
যথেচ্ছ ভাঁটায় । 
মানুষ যখন পাকা ক'রে প্রাচীর তোলে নাই 
মাঠে বনে শৈলগুহায় যখন তাহার ঠাঁই , 
সেইদিনকার আল্‌গা-বিধির বাইরে-ঘোরা প্রাণ 
মাঝে মাঝে রক্তে আজও লাগায় মন্ত্রগান । 
সেইদিনকার যথেচ্ছ-রস আস্বাদনের খোঁজে 
মিলেছিলেম অবেলাতে অনিয়মের ভোজে । 
কারো কোনো স্বত্বদাবীর নেই যেখানে চিহ্ন , 
যেখানে এই ধরাতলের সহজ দাক্ষিণ্য , 
হালকা সাদা মেঘের নিচে পুরানো সেই ঘাসে , 
একটা দিনের পরিচিত আমবাগানের পাশে , 
মাঠের ধারে , অনভ্যাসের সেবার কাজে খেটে 
কেমন ক'রে কয়টা প্রহর কোথায় গেল কেটে ।